এখন আর মা হুকুম করে না, অনুরোধ করে

প্রথম প্রকাশঃ মে ৮, ২০১৬ সময়ঃ ৪:২৬ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৪:৩৫ অপরাহ্ণ

সংগৃহীত:

file (15)কিছু লোককে দেখতাম গান শুনতে শুনতে বা সিনেমা দেখতে দেখতে কাঁদে। অদ্ভুত লাগত, বিরক্তও, আমি কখনও কান্নাকাটি করিনা। একমাত্র মৃত মানুষের সামনে ছাড়া অন্য কোথাও মানুষকে কাঁদতে দেখলে আমার খুব বিরক্ত লাগে। আমি যাকে পছন্দ করি, ও যদি কোন ভ্যালিড কারণ ছাড়া কাঁদে আমি বিরক্ত হই। বলি, “যা বলার বল, কান্নাকাটি করিস না। ন্যাকা ন্যাকা লাগে”। ও আগে খুব দুঃখ পেত, এখন হয়ত সয়ে গেছে। মেয়েদের এই সয়ে যাওয়ার অদ্ভুত রকম একটা শক্তি আছে। আমাদের ছেলেদের হয়ত তার বিন্দুমাত্রও নেই।

কয়েকদিন ধরে এই গানটি শুনলেই, আমার চোখে পানি চলে আসে। কেন বুঝতে চেষ্টা করছি! মা-বাবা কেমন যেন হয়ে গেছে। আগে মা ধমক দিত, জিনিসপত্র উল্টা- পাল্টা করে রাখলে চিল্লাচিল্লি করত। আমিও চিল্লাচিল্লি করতাম। হয়ত বেশিরভাগ ছেলেই করে। এখন মার সাথে একটু জোরে কথা বললে মা কেমন যেন চুপচাপ থাকে। বেশির ভাগ সময় কিছু বলে না। বাবা আগে দেরীতে বাসায় ফিরলে দরজাতেই ধমক দিত। এখন দেরী হলে ফোন করে, অথচ এখন আর ধমক দেয় না। কেমন যেন হয়ে গেছে মা-বাবা। এখন ধমকের সুরে কিছু বললে আমার ভাল লাগে।

আমি এসএসসির সময় রাত ২টা-৩টা পর্যন্ত জাগতাম। মা আমার জন্য বসে থাকত, চা বানিয়ে দিত। আমি বলতাম, ‘আমি পড়ি, তোমার অন্যরুমে জেগে থাকার দরকার কি?’ মা ঠিকই জেগে থাকত। কখনই নিজে নিয়ে খেতে হয়নি, মা পাশে বসে বেড়ে দিয়েছে। আজকাল মার জেগে থাকা নিষেধ, রাত ৯টায় ভাত খেয়েই ঔষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তে হয়। আমরা নিয়ে খাই। প্রতি রাতে খাবার পরে আটটা ঔষুধ খেতে হয়। বাবা-মায়ের আগের ছবিগুলো এখনের ছবির সাথে মিলিয়ে দেখি। সত্যিই আমার মা-বাবা বুড়ো হয়ে গেছে। অসহায় হয়ে যাচ্ছে। এমনটা আমি দেখেছি আমার দাদা দাদি, নানা নানিকে। এমন বাবা মা দেখতে আমি অভ্যস্ত নই, মানসিকভাবে প্রস্তুতও নই। আমার মা আমাকে ধমক দেবে, শাসন করবে, নানা কাজে বাধা দেবে এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু এখন আর বকাও দেয় না, শাসনও করে না। আগে মা একধরনের হুকুম করত, এখন অন্য ধরনের অনুরোধ করে। আমার ভালো লাগে না। সময়টা যদি আজ হতে দশ বছর আগে থামিয়ে দিতে পারতাম খুব ভালো হত।

========

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

সর্বাধিক পঠিত

20G